স্বরধ্বনি

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (নতুন সংস্করণ) - NCTB BOOK

উচ্চারণের সময়ে জিভের উচ্চতা অনুযায়ী, জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী এবং ঠোঁটের উন্মুক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে ভাগ করা হয়। নিচের ছক থেকে স্বরধ্বনির এই উচ্চারণ-বিভাজন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে:

উচ্চারণের সময়ে জিভ কতটা উপরে ওঠে বা কতটা নিচে নামে সেই অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত: উচ্চ স্বরধ্বনি [ই], [উ]; উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি [এ], [ও]; নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি [অ্যা], [অ]; নিম্ন স্বরধ্বনি [আ]। উচ্চ স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ উপরে ওঠে; নিম্ন স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ নিচে নামে।

জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিন ভাগে বিভক্ত: সম্মুখ স্বরধ্বনি [ই], [এ], [অ্যা]; মধ্য স্বরধ্বনি [আ]; পশ্চাৎ স্বরধ্বনি [অ], [ও], [উ]। সম্মুখ স্বরধ্বনির বেলায় জিভ সামনের দিকে উঁচু বা নিচু হয়; পশ্চাৎ স্বরধ্বনির বেলায় জিভ পিছনের দিকে উঁচু বা নিচু হয়।

স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কতটুকু খোলা বা বন্ধ থাকে অর্থাৎ কী পরিমাণ উন্মুক্ত হয়, তার ভিত্তিতে স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত: সংবৃত [ই], [উ]; অর্ধ-সংবৃত: [এ], [ও]; অর্ধ-বিবৃত: [অ্যা] [অ]; বিবৃত: [আ]। সংবৃত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কম খোলে; বিবৃত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট বেশি খোলে।

অনুনাসিক স্বরধ্বনি

মৌলিক স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে বায়ু শুধু মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এ সময়ে কোমল তালু স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। কিন্তু ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে কোমল তালু খানিকটা নিচে নেমে গেলে কিছুটা বায়ু নাক দিয়েও বের হয়। এর ফলে ধ্বনিগুলো অনুনাসিক হয়ে যায়। স্বরধ্বনির এই অনুনাসিকতা বোঝাতে বাংলা স্বরবর্ণের উপরে চন্দ্রবিন্দু (ঁ) ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মৌলিক স্বরধ্বনি: [ই], [এ], [অ্যা], [আ], [অ], [ও], [উ]।
অনুনাসিক স্বরধ্বনি: [ইঁ], [এঁ], [অ্যাঁ], [আঁ], [আঁ, [ওঁ], [উঁ]

অর্ধস্বরধ্বনি

যেসব স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না সেগুলোকে অর্ধস্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় অর্ধস্বরধ্বনি চারটি: [ই], [উ], [এ] এবং [ও]। স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে টেনে দীর্ঘ করা যায়, কিন্তু অর্ধস্বরধ্বনিকে কোনোভাবেই দীর্ঘ করা যায় না। যেমন-

‘চাই’ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং ই। এখানে [আ] হলাে পূর্ণ স্বরধ্বনি, [ই] হলাে অধস্বরধ্বনি।

একইভাবে ‘লাউ’ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [উ]। এখানে [আ] হলাে পূর্ণ স্বরধ্বনি, [উ] হলাে অর্ধস্বরধ্বনি।

দ্বিস্বরধ্বনি

পূর্ণ স্বরধ্বনি ও অর্ধস্বরধ্বনি একত্রে উচ্চারিত হলে দ্বিস্বরধ্বনি হয়। যেমন 'লাউ' শব্দের [আ] পূর্ণ স্বরধ্বনি এবং [উ্‌] অর্ধস্বরধ্বনি মিলে দ্বিস্বরধ্বনি [আ] তৈরি হয়েছে। দ্বিস্বরধ্বনির কিছু উদাহরণ:

[আই্‌]: তাই, নাই 

[এই্‌]: সেই, নেই

[আও্‌]: যাও, দাও

[আএ্‌]: খায়, যায় 

[উই্‌]: দুই, রুই 

[অএ্‌]: নয়, হয় 

[ওউ্‌: মৌ, বউ 

[ওই্‌]: কৈ, দই 

[এউ্‌]: কেউ, ঘেউ

বাংলা বর্ণমালায় দুটি দ্বিস্বরধ্বনির জন্য আলাদা বর্ণ নির্ধারিত আছে, যথা: ঐ এবং ঔ। ঐ-এর মধ্যে দুটি ধ্বনি আছে, একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি [ও] এবং একটি অর্ধস্বরধ্বনি [ই্‌]। একইভাবে ঔ-এর মধ্যে রয়েছে একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি (ও] এবং একটি অর্ধস্বরধ্বনি [উ্‌]।

Content added By

সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন (✓) দাও। 

১. উচ্চারণের সময়ে জিভের কোন অবস্থানের কারণে স্বরধ্বনি ভাগ করা হয়? ক. উচ্চতা খ. সম্মুখ গ. পশ্চাৎ ঘ. সবগুলোই সঠিক 

২. 'উ' উচ্চারণের সময়ে জিভের অবস্থান- ক. উচ্চ-সম্মুখ খ. নিম্ন-সম্মুখ গ. উচ্চ-পশ্চাৎ ঘ. নিম্ন-পশ্চাৎ

৩. 'আ' উচ্চারণের সময়ে ঠোঁটের উন্মুক্তি কেমন? ক. সংবৃত খ. অর্ধ-সংবৃত গ. বিবৃত ঘ. অর্ধ-বিবৃত 

৪. জিভের সম্মুখ বা পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার? ক. দুই খ. তিন গ. চার ঘ. পাঁচ

৫. বাংলা স্বরবর্ণের উপরে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হয় কী বোঝাতে? ক. হ্রস্বস্বর খ. দীর্ঘস্বর গ. অনুনাসিকতা ঘ. ব্যঞ্জনা 

৬. যে সকল স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না তাদের বলে- ক. হ্রস্বস্বর খ. অর্ধস্বর গ. দীর্ঘস্বর ঘ. পূর্ণস্বর 

৭. পূর্ণ স্বরধ্বনি ও অর্ধস্বরধ্বনি একত্রে মিলে হয়- ক. স্বরধ্বনি খ. মৌলিক স্বরধ্বনি গ. স্বল্প স্বরধ্বনি ঘ. দ্বিস্বরধ্বনি 

৮. 'লাউ' শব্দের মধ্যে কোন কোন স্বরধ্বনি আছে? ক. অ+ই, খ. আ+ই্‌ গ. আ+ এ্‌ ঘ. আ+উ্‌

Content added By
Promotion